শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০

ব্রতকথা !

 

আজ দিনটা খুব গরম ছিল। বিকেল বেলায়  ছাদে ওঠা এখন  প্রায় অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। গরমের জন্য আজ একটু দেরীতেই ছাদে উঠলাম । গিয়ে দেখি দিনমনি আজকের যবনিকাপাতের সব অনুষ্ঠানই সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন প্রায়। পাখিও আর ডাকছে না। সূর্যাস্তের আর বিশেষ বাকি নেই। পৃথিবী শান্ত হয়ে এসেছে। সাত অশ্বের রথ মর্ত্যলোকের সীমা পার করে মেঘ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে । ঘোড়ার ক্ষুরের আঘাতে মেঘগুলো ছোট ছোট টুকরো হয়ে যাচ্ছে । সেই রথের পাশ কাটিয়ে সন্ধ্যা নামছে ধীরে। আমি সেই দিকেই তাকিয়ে আছি। সামনে দিয়ে একা এক পাখি উড়ে গেল। সেই রথের উপর থেকে তিনি হাত নাড়ছেন। আমিও হাত জোড় করে তাঁকে প্রনাম জানাই। আজকের মত বিদায়। সেই টুকরো হয়ে যাওয়া মেঘগুলো আবারও হাত ধরাধরি করে এক হয়ে গেছে। এই দৃশ্যপটের ওপর তারা যবনিকা টেনে দিলো। এক মহাজাগতিক দিনের অবসান ঘটলো। 

এই রেশ টুকু যেন আর কাটতে চাইছে না। মন বলছে যেন এখানেই শেষ নয়, আরো কিছু আছে, আরো কিছু.........। এক ব্যথা বহুকাল, সে যে কতকাল, সে আর এখন মেপে বলতে পারি না, বয়ে নিয়ে চলেছি। সে ব্যথা একান্ত আমার। তাকে রাখি এমন আধার এই পৃথিবীতে নেই। অত্যন্ত মূল্যবান সে ব্যথাটুকু বর্তমানে আমার সম্পদে পরিণত হয়েছে। তাকে অতি যত্নে অন্তরের গভীরে, সেই যেখানে একটি দীপ অনির্বান শিখায় জ্বলছে, সেই আলোটির পাশেই রেখেছি। সেই শিখাটির আলো ছাড়া যে এই ব্যথার অস্তিত্ব অনুভবেই আসবে না

তারপর সেই কত রাতের বেলায় চারপাশের আঁধার চিরে বিদ্যুৎ চমকায়। গুরু গুরু সারা আকাশ জুড়ে বাজতে থাকে। সেই বিপুল উৎসবের সাক্ষী হয়ে প্রকৃতি আনন্দে আত্মহারা। গাছেরা আনন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে। গাছে গাছে পাখির ডাক, সময়কে অকালে জাগিয়ে, প্রকৃতিকে আনন্দে মাতিয়ে অশুভকে সন্ত্রস্ত করে তার এই উপস্থিতি আমার সত্তাকে প্রান প্রাচুর্যের ধারায় ভরিয়ে তোলে। আমার সত্তা জেগে ওঠে। চারপাশের সকল ভাঙ্গনের শব্দে, অনুভবে যে বিশ্বাসের জোর অবিশ্বাসের পাঁকে চাপা পড়ে গিয়েছিল, সেই পাঁক সরে গিয়ে আবার, আবারও একবার সকল শুভ ইঙ্গিত ঝলমলিয়ে উঠলো। সেই প্রলয় ছন্দে অন্তরের দীপশিখাটিও কেঁপে উঠলোআজ এই মধ্যরাত্রের প্রলয় যাপনে রবি ঠাকুরের সেই কথাটি মনের ওপর দিয়ে বয়ে গেল, আর সকলেরে তুমি দাও, শুধু মোর কাছে তুমি চাও। এই মরুজীবনের পথে কত বার কত রূপে এসেছ এই ব্যথাটুকু হরণ করতে। তোমার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছো, বিনিময়ে চেয়েছো এই ব্যথাটুকু। না, কোনো প্রলোভনেই এই বিনিময় পূর্ণতা পায় নি। আজ তুমি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছো যে এ ব্যথা নিতান্তই আমার। তুমি ব্যর্থ হয়েছো। এই ব্যথাব্রত সাধনার আমিই সাধক। আর তাই, বারবার ফিরে ফিরে আসো আমার সাধনার তপোমন্দিরে। অতি যত্নে সুকোমল হাতে সব দুঃখ মুছিয়ে দাও। কিন্তু দুঃখের চিহ্ন মুছে দেওয়া, সে বোধহয় তোমারও সাধ্যের বাইরে। এক্ষেত্রে তোমারও সীমা নির্ধারিত করা আছে। জীবনের দুঃখকাল সময়ের সাথে অতীত হয়, কিন্তু দুঃখকালের স্মৃতি? সে শুধু ব্যথাই বয়ে আনে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। তোমার নিজের হাতে যে দুঃখ দান করেছিলে আমায়, এতদিন পরেও কি সেকথা ভুলতে পেরেছো? আজ তোমার ব্যথাও সীমাহীন। এ ব্যথা তোমারও যাবার নয়। তাই তো আজ মন্দিরে আমার সাথে তোমারও আসন পেতেছি। একসাথে আজ দুজনেই এই ব্যথাব্রত উদযাপন করবো

এসো..................

1 টি মন্তব্য:

কবিতা ৮ ।

 সপ্তসিন্ধু পার করে লখিন্দর ফেরে ঘরে।সাথে করে  বিবিধ রতন। শঙ্খ বাজে, উলু দেয় এয়োতি, পুরজন। বাপ তার, চন্দ্র সওদাগর। লখার সাফল্যে মুখে তার  গো...